* সঙ্গে এলেন দুই পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান ও সৈয়দা শর্মিলা রহমান
* সকাল থেকেই বিমানবন্দরের আশপাশে ঠেকানো যায়নি সাধারণ মানুষের ঢল
* দুপুর ১টা ২৫ মিনিটে ফিরোজায় পা রাখেন বেগম জিয়া
* খালেদা জিয়া ভালো আছেন, জাতির প্রয়োজনে নেতৃত্বও দেবেন : ডা. জাহিদ
* খালেদা জিয়াকে বাংলাদেশে স্বাগতম : সারজিস
* খালেদা জিয়ার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে আমরা আনন্দিত : জিএম কাদের
দীর্ঘ চার মাস পর যুক্তরাজ্যের লন্ডন ক্লিনিকে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে বহনকারী কাতারের আমিরের বিশেষ ফ্লাইটটি গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটের দিকে অবতরণ করে। এসময় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা তাকে স্বাগত জানান। গুলশানের বাসভবন ফিরোজার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। বিমানবন্দর থেকে ১১টা ৫ মিনিটে গাড়িতে ওঠেন তিনি। দুপুর ১টা ২৫ মিনিটে গুলশানের ফিরোজা ভবনে পা রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার সময় নেতা-কর্মীরা বেগম জিয়াকে ঘিরে ধরেন। লাখো নেতাকর্মীর ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। নেতাকর্মীদের সামাল দিতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীকে হিমশিম খেতে হয়। দেশের রাজনৈতিক মঞ্চে অনেকদিন ধরেই গুঞ্জন, তিনি আর ফিরবেন না, হয়তো দেশের মাটিতে আর রাজনীতি করবেন না। সেই সব গুজব, সন্দেহ আর অপেক্ষার অবসান হলো।
জানা গেছে, রাজকীয় মর্যাদায় চিকিৎসা শেষে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দেশে ফেরেন কাতারের আমিরের দেয়া একটি বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে। বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে হাজার হাজার নেতাকর্মী জড়ো হন তাকে শুভেচ্ছা জানাতে। বহু মানুষ সকালে রওয়ানা দিয়ে দুপুরে এসে দাঁড়ান ফিরোজার সামনের রাস্তায়। কারো হাতে ছিল ফুল, কেউ আবার এনেছিলেন নেত্রীর ছবি। কান্নাভেজা চোখে অনেককেই বলতে শোনা গেছে, আমাদের মা ফিরে এসেছেন, খালেদা জিয়া মানেই বাংলাদেশ।
ফিরোজার সামনের রাস্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তাবেষ্টনী ছিল। সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাবের সদস্যরা তৎপর থাকলেও নেতাকর্মীদের আবেগ থামানো যায়নি। হেঁটে হেঁটে কেউ এসেছেন টঙ্গী থেকে, কেউ বা নারায়ণগঞ্জ থেকে। ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড থেকে হাজারো মানুষ এসে দাঁড়িয়েছিলেন রাস্তার মোড়ে মোড়ে। সেøাগান দিতে দিতে নেমে পড়েন মূল সড়কে। এক পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তাদেরকে নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়। বিএনপির নেতাকর্মী ছাড়াও আশপাশের উঁচু ভবনের বাসিন্দারাও হাত নেড়ে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর প্রতি নিজেদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটান। বিএনপি চেয়ারপারসনের বিদেশ যাত্রার পর থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে গুজব ছিল, এটাই তার শেষ বিদায়। অনেকে বলেছিলেন, খালেদা জিয়া ‘মাইনাস টু’র শিকার হয়েছেন, আর ফিরবেন না। কিন্তু এই প্রত্যাবর্তনে গুজবের অবসান হলো। নেতাকর্মীরা বলছেন, ‘গণতন্ত্র আবার আশার আলো দেখছে।’
উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৭ জানুয়ারি লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। পরদিন ৮ জানুয়ারি হিথ্রো বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান বড় ছেলে তারেক রহমান ও পরিবারের সদস্যরা। সেখান থেকে সরাসরি দ্য লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি হন তিনি। ১৭ দিন চিকিৎসার পর বড় ছেলের বাসায় উঠেন। পরবর্তীতে সেখানেই তার চিকিৎসা কার্যক্রম চলে। সোমবার (৫ মে) স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে ৪টায় কাতারের আমিরের দেয়া রয়্যাল এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন তিনি। তার সাথে দেশে এসেছেন দুই পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান ও সৈয়দা শামীলা রহমান সিঁথি এবং চিকিৎসক ও মেডিকেল বোর্ডের সদস্যসহ ১৩ জন।
বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, খালেদা জিয়া ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধের প্রতীক। তিনি ফিরে আসায় গণতন্ত্রের উত্তরণ সহজ হবে। এই জাতির জন্য এটি একটি নতুন প্রত্যাশার দিন। খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার দুই পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান ও সৈয়দা শর্মিলা রহমানও দেশে এসেছেন।। ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর দেশত্যাগের পর এবারই প্রথম দেশে ফিরলেন তারেক রহমানের স্ত্রী জুবাইদা রহমান। এ দিনটি তাই আরও স্মরণীয় হয়ে উঠেছে বিএনপি সমর্থকদের কাছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরও বলেছেন, দীর্ঘ যাত্রা শেষে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কিছুটা অসুস্থ। এখন তিনি বিশ্রামে আছেন। নেতাকর্মীদের সেøাগান দিতে বারণ করেছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেছেন, দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে চিকিৎসায় বেগম খালেদা জিয়া বর্তমানে শারীরিকভাবে অনেকটা ভালো আছেন। একইসঙ্গে পারিবারিক আবহে থাকায় মানসিকভাবেও তিনি আগের চেয়ে ভালো। এমন তথ্য জানিয়ে তার পূর্ণ সুস্থতার জন্য তিনি দোয়া চেয়েছেন। তিনি আরও বলেন, জাতির প্রয়োজনে নেতৃত্বও দেবেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, লন্ডনে যাওয়ার পর থেকে তারেক রহমান তার মায়ের চিকিৎসার জন্য যা করেছেন সেজন্য কৃতজ্ঞতা জানাই। পাশাপাশি চেয়ারপারসনের মানসিকভাবে প্রশান্তি আনতে কাজ করেছেন তার তিন নাতনি। আমরা তাদের কাছেও কৃতজ্ঞ। লন্ডনের বিএনপির নেতাকর্মী, অন্যান্য দলের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে অনেকেই দোয়া করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। চেয়ারপারসনও সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। বর্তমান অবস্থা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, আল্লাহর রহমতের কারণে তিনি অনেকটা শারীরিক ও মানসিকভাবে অনেক ভালো আছেন। লম্বা জার্নি করেছেন, আবার বাসা পর্যন্ত আসতে একটা সময় লেগেছে। তারপরও মানসিকভাবে ভালো আছেন। শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল আছে।
বিএনপির মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্য থেকে শুরু করে বিএনপি ছাড়াও অন্যান্য দলের নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে জাহিদ হোসেন বলেন, সবাই চেয়ারপারসনকে সুস্থ করার জন্য দোয়া করেছেন, তার প্রতি যে আনুগত্য দেখিয়েছেন, মানসিকভাবে সাপোর্ট দিয়েছেন তাদের প্রতিও তিনি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। বিশেষ করে কাতার সরকার এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সেবা দিয়েছেন এজন্য দেশটির আমির ও সরকারের প্রতি খালেদা জিয়া কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন বলে জানান ডা. জাহিদ। বিমানবন্দর থেকে বাসায় ফেরার পথে সার্বিক শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা দেয়ার কথা তুলে ধরে ডা. জাহিদ বলেন, সুশৃঙ্খলভাবে কাজ করে সহযোগিতা করার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে সব আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই। ধন্যবাদ জানাই গণমাধ্যমের প্রতি। চেয়ারপারসনকে হাসপাতাল থেকে বাসায় গৃহবন্দী করে রাখার দিন থেকে এখন পর্যন্ত সবসময় আপনারা পাশে ছিলেন।
চিকিৎসা শেষে যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে দেশে ফেরায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে একটি পোস্ট করেন তিনি। ওই পোস্টে সারজিস লেখেন, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বাংলাদেশে স্বাগতম। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, জুলাই অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের আপামর ছাত্র-জনতা যে আকাক্সক্ষাগুলোকে বুকে ধারণ করে অকাতরে রক্ত দিয়েছে, জীবন দিয়েছে, সেই আকাক্সক্ষাগুলোকে সামনে রেখে তিনি এবং তার দল বিএনপি আপসহীনভাবে বাংলাদেশের গণতন্ত্র রক্ষায় দেশের স্বার্থকে সর্বাগ্রে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করে যাবেন। তার সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, দীর্ঘ দিন দেশের বাইরে চিকিৎসাধীন থাকার পর খালেদা জিয়ার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে আমরা আনন্দিত। দেশ আজ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। অর্থনৈতিক সংকট, সামাজিক অস্থিরতা, আইন শৃঙ্খলার অবনতি ও অস্থিতিশীল রাজনীতি দেশকে এক ভয়াবহ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত করছে। গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান একথা বলেছেন। জিএম কাদের বলেন, পরস্পরের প্রতি ঘৃণা-বিদ্বেষ, রাজনৈতিক দল ও জনগণের মধ্যে বিভক্তি ও প্রতিহিংসার রাজনীতির প্রসার ঘটছে। দেশ প্রতিদিন এক সংঘাতময় পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সে প্রেক্ষিতে, বেগম খালেদা জিয়ার মতো বিজ্ঞ-অভিজ্ঞ ও জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ, জনগণের মধ্যে পরস্পরের প্রতি সহনশীলতা, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য সৃষ্টির মাধ্যমে দৃঢ় ঐক্য গড়ে তুলবেন ও দেশের বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতির অবসানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন, বলে প্রত্যাশা করি। আমরা তার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

লাখো নেতাকর্মীর ভালোবাসায় সিক্ত খালেদা জিয়া
- আপলোড সময় : ০৬-০৫-২০২৫ ১১:৩৫:০৯ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৬-০৫-২০২৫ ১১:৩৫:০৯ অপরাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ